ইব্রাহিম গাজী, বসিরহাট ;
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ডহীন মানুষ যেমন দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষাবিহীন কোনো জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। মানুষের মধ্যে আল্লাহপ্রদত্ত যেসব গুণাবলি ও প্রতিভা সুপ্ত রয়েছে, তার বিকাশ ঘটে শিক্ষার মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনের প্রথম কথাই হলো ‘পড়ো’। মানব জাতির উদ্দেশ্যে এটিই হলো আল্লাহর প্রথম নির্দেশ।
শিক্ষা বিস্তারে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ নীতি
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মাত্র ২৩ বছরে মানব জাতির এক অপূর্ব জাগরণ এনে দিয়েছেন। যারা একদিন তাঁর প্রাণের শত্রু ছিল, তারাই তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে পরম বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। যেখানে সর্বত্র রক্তক্ষয়ী সংঘাত, খুন-খারাবির আগুন দাবানলের মতো জ্বলে উঠেছিল, সেখানে তাঁর শিক্ষার কারণেই শান্তি ও মীমাংসার ফুল ফুটেছিল। যে সমাজে প্রস্তরনির্মিত মূর্তিগুলোকে সিজদা করা হচ্ছিল, সেখানেই তাওহিদের পতাকা উড্ডীন করা হয়েছিল। প্রিয়নবী (সা.) যে পন্থায় মানুষকে সত্যের শিক্ষা দিয়েছিলেন, তন্মধ্যে একটি হলো মানুষের প্রতি দয়ামায়া, তাদের কল্যাণ কামনা এবং তাঁর বিনম্র স্বভাব। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে রাসুল (সা.)-এর বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন এভাবে- ‘আল্লাহপাকের অনুগ্রহে (হে রাসুল!) আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয়েছেন, আর যদি আপনি রূঢ় মেজাজ ও কঠিন হৃদয় বিশিষ্ট হতেন, তাহলে এসব লোক আপনার চার পাশ থেকে দূরে সরে যেত।’ (৩ : ১৫৯)
দ্বিতীয়ত, প্রিয়নবী মানুষকে যে কাজের শিক্ষা প্রদান করতেন, তিনি নিজেও সে কাজ করতেন। অর্থাৎ তাঁর উপদেশ বা ওয়াজ-নসিহত শুধু মানুষের জন্য ছিল না বরং নিজে এর ওপর সর্বপ্রথম আমল করতেন।
আরও একটা দিক একটু ভাবার
শিক্ষার ব্যাপারে বিভিন্ন মনিষী বিভিন্ন মহামানব
অনেক অবদান বা অনেক শিক্ষা নীতির কথা বলেছেন, তা আমরা অনেকেই জানি বা দেখেছি
বিশেষ করে কখনো কখনো কোনো কোনো স্কুলের দেওয়ালের গায়ে লেখা থাকে একটা শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি কথা পাশেই লেখা থাকে কে বলেছেন তার নাম।
কিন্তু আমরা কখনো কি দেখেছি কোনো স্কুলের দেওয়ালের গায়ে দেখেছি মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষার ব্যাপারে নীতি কথা লেখা আছে!
অথচ যত মহামানব শিক্ষার ভূমিকা রেখেছে তাহারা সকলেই নবীন, আর হজরত মুহাম্মাদ সঃ ১৫০০ বছরের প্রবীণ,
আমাকে যদি আরও বলতে হয় তাহলে কূন্ঠাবোধ করবো না এ কথা বলতে,যে যুগে যুগে যত শিক্ষাবিদদের জন্ম হয়েছে হজরত মুহাম্মাদ সঃ হলো সকল শিক্ষাবিদদের শিক্ষক হয়ে আবির্ভাব হয়েছিলেন।
শিক্ষার ব্যাপারে স্বামী বিবেকানন্দ তিনি অনেক ভূমিকা রেখেছে তিনি ও অনেক কথা বলেছেন শিক্ষার ব্যাপারে, শিক্ষার ব্যাপারে স্বামি বিবেকানান্দ যত কথা বলেছিলেন তার ভিতরে যেটা সবচাইতে মারাত্মক ও যথার্থ কথা সেটা হল “লেখা পড়া শিখতে হয় শুধুমাত্র মানুষ হওয়ার জন্য” কিন্তু আমারা কি জানি দেড় হাজার বছর আগে হজরত মুহাম্মাদ সঃ কি বলেছেন তিনি যেটা বলেছিলেন সেটা আরও মারাত্মক ও আরও গুরুত্বপূর্ণ তিনি বলেছিলেন “যে ব্যাক্তি শিক্ষা অর্জন করলো অথচ নিজের জীবনে সেই বাস্তবায়ন করলো না সেই শিক্ষা বৃষ্টিহীন মেঘের মত”। শিক্ষার ব্যাপারে হজরত মুহাম্মাদ সঃ এর অবদান কতটা তা আমার মত অযোগ্য ব্যাক্তির কলমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়।
শিক্ষার গুরুত্ব দিতে যেয়ে হজরত নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ” দোলনা থেকে নিয়ে কবর পর্যন্ত তোমারা তোমরা শিক্ষা অর্জন কর” আজ শিক্ষিত বিবেচিত ব্যাক্তির ব্যাক্তির কাছে আমার জিজ্ঞাসা এই কথাটা কতটা গুরুত্ব বহন করে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা
“জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র”
বর্তমান যুগে যে বেশি তথ্য জানে সে বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। যে তার জ্ঞানের পরিধিকে বড় করল সে আসলে তার যোগ্যতা ও ক্ষমতার পরিসরকে বিস্তার করল। মুসলমানদের জন্য জ্ঞান অর্জন যেহেতু বাধ্যতামূলক, সেহেতু জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
হজরত নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি শুধু শিক্ষার আর শিক্ষার্থীর মর্যাদা দেননি তিনি যে সময়ে শিক্ষালাভ করে সেই সময়েরও মর্যাদা দিতে যেয়ে হজরত নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে শিক্ষা অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।”
মানুষের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের উপযোগী জ্ঞান ও বিদ্যা হচ্ছে জাগতিক শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি। এই শিক্ষার মূল সূত্র অভিজ্ঞতা, এই জন্যই হজরত নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন “তোমরা জ্ঞান অর্জন কর এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখ, তোমরা তাকে সন্মান কর যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করছে”।
আমি কয়টা উদাহরণ তুলে ধরব লেখার কলেবর বৃদ্ধি পাবে,আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই সেখানে শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ, যে কারণে তারা সমৃদ্ধি ও উন্নতির চরম শিখরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তাই ইসলাম সবসময় যেকোনো বিষয়ের ওপর শিক্ষার গুরুত্ব দেয় এবং গুরুত্ব দিতে যেয়ে হজরত নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জ্ঞান অর্জন ফরজ করে দেন। মহানবী (সা.) বলেন ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’
10,537 total views, 3 views today