নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আলনূর জামে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত এখন পর্যন্ত ৪৯ জন। ইচ্ছা করলে গত কালকেই এই বিষয়ে লিখতে পারতাম। শুধু অপেক্ষা করছিলাম আমার সোনার বাংলার হিরের টুকরো বাংলা ও গেরুয়া পন্থী সাংবাদিক বন্ধুগন এই নৃশংস সন্ত্রাসবাদীদের কি বলে আখ্যায়িত করেন তা জানার জন্যে। হ্যাঁ আমার ধারণা একেবারেই ভূল হয়নি। সাংবাদিক বন্ধুদের অপারেশন করার আগে মূল ঘটনা আর একবার স্মরণ করি।
মালদা জেলার আফরাজুল রাজস্থানে যে ভাবে সন্ত্রাসবাদের দ্বারা নিহত হয়েছিলেন প্রায় সেই রকম ভাবেই সন্ত্রাসী নিজের সন্ত্রাসবাদের নিজের কুকর্মের রেকর্ডিং রাখার জন্য মাথায় ক্যামেরা লাগিয়ে গাড়িতে করে লাইভ করতে করতে মসজিদের দিকে এগিয়ে এলো। গান চলছে গাড়িতে। গাড়ি রেখে গাড়ির ভেতরে রাখা বন্দুক গুলো থেকে একটা বন্দুক বেছে নিয়ে মসজিদে ঢুকলো। রানিং ক্যামেরায় লাইভ কিন্তু চলছেই। মসজিদের গেটে ঢোকার আগে থেকেই পরিকল্পিত ভাব গুলি চালাতে শুরু করল। মসজিদের মুসল্লিদের দিকে ধরে ধরে গুলি চালাল। বেশ কিছুক্ষণ এই রকম চলার পর সন্ত্রাসী খুনি শয়তান মসজিদ ছেড়ে বাইরে এসে গুলি চালালো। এদিক সেদিক লক্ষ্য করে এবার গাড়িতে গিয়ে এই বন্দুক টি রেখে দিয়ে আর একটি বন্দুক নিয়ে এলো। মনে হলো ওটার গুলি বোধহয় শেষ হয়ে গেছে। আবার মসজিদের ভিতরে ঢুকে দেখলো যারা একটু আধটু বেঁচে আছেন তাঁদের দিকে আবার ধরে ধরে গুলি চালাল। বাইরে এসে রাস্তার ধারে এক একজন কে গুলি করল। এবার গাড়িতে গিয়ে গাড়ির ভিতরে বন্দুক রেখে গাড়ির ড্রাইভারের সিটে বসে গান শুনতে শুনতে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। এখনও পর্যন্ত লাইভ চলছে। ভিডিও তে এরকম ভয়ানক দৃশ্য এই প্রথম দেখলাম। ২৩ মিনিটের এই ভিডিও টি দেখার পর আমার মানসিক অবস্থা মোটেও ভাল যাগায় নেই। হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও ঐ ভিডিও টির কথা মনে পড়লে এখনো বুকের ভিতর টা ভয়ে দুরু দুরু করে উঠছে।
হে আমার সোনার বাংলার হিরের টুকরো বাংলা ও গেরুয়া পন্থী সাংবাদিক বন্ধুগন এই নৃশংস সন্ত্রাসবাদীদের আপনারা ‘সন্ত্রাসবাদী’ না বলে ‘বন্দুকবাজ’ বলতে পারলেন? এটা যদি ‘বন্দুকবাজ’ হয় তাহলে ‘সন্ত্রাসবাদ’ কোনটি হবে স্যার??? স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করা কালীন এতগুলো নিরীহ নির্দোষ মানুষের উপরে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো হলো অথচ আপনারা এটাকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ বলতে পারলেন না কেন? হ্যাঁ এর উত্তর আপনি জানেন কিন্তু বলতে পারবেন না, কেননা এর উত্তর দিলে আপনার সাংবাদিকতার কলমের কালির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। যে সমস্ত সাংবাদিক বন্ধুদের কলমের কালিতে সন্ত্রাসবাদের সরাসরি যোগসাজশ রয়েছে তারাই কেবল সন্ত্রাসবাদের যাগায় বন্দুকবাজ বলে চালিয়ে দিতে পারে। সন্ত্রাসবাদ শব্দটি কেবলমাত্র মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ করেছেন আপনারা। আল্লাহর কাছে আপনাদের কোনো ক্ষমা নেই। আপনারাই সন্ত্রাসবাদীদের আসল আশ্রয়দাতা। হলফ করে বলবেন- আপনাদের ঐ বন্দুকবাজ যদি মুসলিম হতেন তাহলে কি সন্ত্রাসবাদ না বলে কি বন্দুকবাজ বলতে পারতেন?
হে আমার সোনার বাংলার হিরের টুকরো বাংলা ও গেরুয়া পন্থী সাংবাদিক বন্ধুগন নীচের লেখাটা একবার পড়ার সময় পাবেন?
ইতিহাস কি বলে, জঙ্গী কারা?
১ – হিটলার, একজন অমুসলিম ৬০ লক্ষ ইহুদি হত্যা করেছিলো মিডিয়া একবারও তাকে বলেনি সে খৃষ্টান টেররিস্ট জঙ্গীবাদ মৌলবাদ !!
২ – জোসেফ স্ট্যালিন একজন অমুসলিম সে ২০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে, এবং ১৪. ৫ মিলিয়ন মানুষ অসুস্থ হয়ে ধুকে ধুকে মারা গেছে মিডিয়া একবারও তাকে বলেনি সে খৃষ্টান টেররিস্ট জঙ্গীবাদ!!
৩ – মাও সে তুং একজন অমুসলিম ১৪ থেকে ২০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে !
মিডিয়া একবারও তাকে বলেনি সে বৌদ্ধ টেররিস্ট !!!
৪ – মুসলিনী (ইটালী) ৪ লাখ মানুষ হত্যা করেছে ! সে কি মুসলিম ছিল ? অন্ধ মিডিয়া একবারো বলে নাই খৃষ্টান টেররিস্ট !!!
৫ – অশোকা (কালিঙ্গা বেটল) লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে ! মিডিয়া একবারও তাকে বলেনি সে হিন্দু টেররিস্ট !!!
৬ – আর জর্জ বুশ ইরাকে, আফগানিস্থানে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে ! মিডিয়া তো বলেনি খৃষ্টান টেররিস্ট !!!
৭ – এখনো মায়ানমারে প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের খুন , ধর্ষণ , লুটপাট, উচ্ছেদ করছে ! তবুও কোনো মিডিয়া বলে না বৌদ্ধ টেরোরিস্ট !!!
ইতিহাস সাক্ষী পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড় বড় গনহত্যা করেছে যারা তারাই দিন রাত গণতন্ত্র জপে মুখে ফেনা তুলে ! অথচ এদের দ্বারাই মানবতা লুন্ঠিত হয়েছে বারংবার !
এই পৃথিবীর বুকে সব চেয়ে কম অপরাধীদের আপনারা বারংবার সন্ত্রাসবাদী বলে চেঁচামেচি করেছেন।
বুদ্ধিজীবী আর কথিত গণতন্ত্র প্রেমিকদের কাছে প্রশ্ন-
ক. যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল ?
খ. যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল?
গ. যারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারের পর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীকে হত্যা করেছিল,তারা কি মুসলিম ছিল?
ঘ. যারা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল ?
ঙ. যারা আমেরিকা আবিষ্কারের পর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য উত্তর আমেরিকাতে ১০০ মিলিয়ন এবং দক্ষিন আমেরিকাতে ৫০ মিলিয়ন রেড- ইন্ডিয়ানকে হত্যা করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল ?
চ. যারা ১৮০ মিলিয়ন আফ্রিকান কালো মানুষকে কৃতদাস বানিয়ে আমেরিকায় নিয়ে গিয়েছিল, যাদের ৮৮ ভাগ সমুদ্রেই মারা গিয়েছিল এবং তাদের মৃতদেহকে আটলান্টিক মহাসাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তারা কি মুসলিম ?
যখন কোন অমুসলিম কোন খারাপ কাজ করে, নির্যাতন করে, খুন করে তখন এটাকে বলা হয় অপরাধ ! আর যখন কোন মুসলিম হাজার নির্যাতনের শিকার হয়ে একবার প্রতিবাদ করে তখন এটাকে বলা হয় মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, টেররিস্ট ইত্যাদি।
উপরে উল্যেখিত কাজগুলো যাদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে মূলত তারাই আশল জঙ্গী। অযথা কেবলমাত্র মুসলমানদেরকে সংবাদ মাধ্যমে জঙ্গী বানাবার অপচেষ্টা বন্ধ করুন কারন এই সমস্ত জঙ্গী তৎপরতার সাথে
মুসলমানদের দুরতম কোন সম্পর্কও নেই। ইতিহাসই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও টেররিস্ট এদের কোন ধর্মীয় চরিত্র থাকে না। কেবল মাত্র সংবাদ মাধ্যম নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য একটা সম্প্রদায়কেই জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও টেররিস্ট বলে প্রচার করছে। এদের ষড়যন্ত্রে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে সারা পৃথিবী।
এই আর্টিকল এ কোন ভুল তথ্য থাকলে আমাকে জানাবেন সংশোধন করে নেব ইনশা আল্লাহ্।
2,272 total views, 9 views today